(একটু সত্য, অনেকটুকু কল্পনা, সবকিছু মিলে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা এবং কতগুলো মিথ্যা)
মাধবীর পরিচয়টা আগে দিয়ে নিই। ও হচ্ছে আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী। যে আমাকে
চিনিয়েছে হটহাট, টিএসসি, সংসদ ভবন, কফি খাওয়া আরো অনেক কিছু। থাকে একটা মহিলা হোস্টেলে। প্রায় প্রতিদিন বিকেলের একসাথে আড্ডা দিই। আর বাড়ী!!! সেটা দিয়ে কি হবে!!! আমার মনের পুরোটা জুড়ে ওর জন্য বিশাল আলিশান বাড়ী বানানো আছে।
এবার আমার কথা বলি। একটাই কাজ। পড়ালেখা না করা। ওহ... আরেকটা কাজ হচ্ছে নচিকেতার গান শোনা। সব মিলিয়ে..... এটা বলা যায়, গুরুর সবগুলো গানই আমার মুখস্থ। নচিকেতার মতো গান গাইতে না পারলেও তার মতো দাঁড়ি রাখার চেষ্টায় আছি। আজ দেড় বছর হলো শেভ বন্ধ। এক দুষ্টু ছেলের প্ররোচনায় গাঁজাও ধরেছিলাম। সে বলেছিল, "খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোন কি আর করে তখন... স্বপ্ন দেখে মন" এর দ্বারা নাকি কোণায় গিয়ে গাঁজা খাওয়া বুঝিয়েছে। কিছু দিন পর বুঝলাম পুরোটাই ভুয়া। দাম দিয়ে যন্ত্রণা কেনার নাম, টাকা দিয়ে গাঁজা কেনা নয়।
যাই হোক এবার বলি বৈশাখের ১ম দিনটির সাথে নচিকেতা, মাধবী আর আমি কি করে এক হলাম। সময়টা ২০০১। এপ্রিল মাসের গরমে ঘামে ভিজে একেবারে অস্থির। তখন আমার নেশা বলতে নচিকেতা, মাধবী, চা আর সিগারেট। জীবনের একটাই লক্ষ যেভাবেই হোক জীবনে
অন্তত একবার সামনা-সামনি নচিকেতার গান শোনা, কথা বলা এবং যেভাবেই হোক না কেন.. তার ব্যাগ টানার চাকরীটা হলেও নেয়া। আর বড় শিল্পীর ব্যাগ তো বড় আর ভারি হবেই। কাজেই আমার টিংটিয়ে শরীরে শক্তি বাড়াতে নিয়মিত ছোলা খাচ্ছি। হঠাৎ একটা ঝড় এলো জীবনে। নচিকেতা নাকি ১৩ এপ্রিল ঢাকায় কনসার্ট করবে। (এর পরের অবস্থাটা চিন্তা করুন!!!) আমি তখন বেইলি রোড চিনি না। তাই মাধবীকে সাথে নিয়ে সাগর পাবলিশার্স থেকে টিকেট কিনলাম। মাধবী জানে, ওকে আমি খুব ভালবাসি। আজো বলা হয় নি। তবে হয়ে যাবে। আর আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ওর ব্যাপারে। কাজেই এখনি বলতে হবে এমন কোন মানে নেই। মাঝে একবার ওর জন্য সে কি হাঙ্গামা। শয়তান ছেলেরা আমার বুকে পিস্তল ঠেকিয়েছিল। .... যাই হোক ওসব কথা বলতে গেলে আসল কথাটাই বলা হবে না। ও আরেকদিন সুযোগ পেলে বলব।
কনসার্টের দিন আমরা ৫ বন্ধু একসাথে গেলাম। ভেনু্ আর্মি স্টেডিয়াম। টিকিট ছিল ৪টি। মানুষ ৫ জন। ৫ম জনের সাথে তখন আমার ঝামেলা চলছে। আসার সময় সে যোগ দিয়েছে। হঠাৎ কি মনে হতেই ওদের ঢুকিয়ে দিয়ে আমি বাইরে রয়ে গেলাম। পরে অবশ্য ঢুকেছিলাম।
নচিকেতার গানের সময় দু হাতে দুটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে চলে গেলাম একেবারে মঞ্চে। পিঠে আর্মির লাঠির বাড়ি পড়ল। থোরাই কেয়ার করি। আরো পড়ল। এক সময় পড়ে গেলাম। কে রক্ষা করল, জানি না। পরে শুনলাম, নচিকেতা নিজে একজনকে পাঠিয়ে আমাকে রক্ষা করল। আর্মি ভাইর প্রতি ভালবাসায় মনটা ভরে গেল। প্রতীক দা, যিনি আয়োজকদের একজন। তিনি আমাকে একটা মোবাইল নম্বর দিয়ে বললেন রাতে ফোন করতে।
রাতে ফোন করতেই বললেন, কাল সকাল সাড়ে পাঁচটায় গুলশান পার্ল রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। গুরু নচিকেতা আমার সাথে কথা বলবেন!!! (এর পরের মুহূর্তটা বর্ণনা করা কি সম্ভব!!) কিন্তু কাল তো রমনায় মাধবীর সাথে দেখা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ কথাও হবে। কাল পহেলা বৈশাখ। রমনায় মাধবীর অনুষ্ঠান ভোর থেকে। তারপর আমাদের দেখা হবে। অনেক দিনের ভাবনা ওকে বৈশাখের প্রথম দিনটিতে আমি জানাবো। ও নিজেও জানাল আমাকে তার জরুরী প্রয়োজন। সমস্যা নেই। গুরুর কাছে তো একদম সকালে.... আর মাধবীর সাথে ১০টায়।
তখন তো আজকের মতো মোবাইল আর সিএনজি ছিল না। ১০ টাকা মিনিটে ফোন করে প্রতীক দার কাছ থেকে লোকেশন নিলাম। কিন্তু পেঁৗছতে একটু দেরী হয়ে গেল। কারণ আমি তখনও ঢাকা চিনতাম না। গিয়ে দেখি সবাই চলে গেছে। সারা রাত এক বন্ধুকে দিয়ে গুরুর স্কেচ করিয়েছি। মাথা নিচু করে, চুপ বসে রইলাম। প্রায় আধা ঘণ্টা পর একটা মাইক্রো এসে হোটেলে ঢুকলো। দুজন লোক ভেতরে গিয়ে আবার বের হবার সময় বলল, রাকেশ না!!!
জি্ব।
এতো লেট!! জলদি মাইক্রোতে উঠো। গুরু কেডস রেখে গেছে। তাই আবার ফেরত আসলাম। চল, গুরু এয়ারপোর্টে আছে। তোমার কথা কয়েকবার বলেছে। (তখন কেমন লাগছিল ভাবেন তো!!) গাড়ী বিশ্বরোডে উঠার পর, প্রতীক দা বলল, রাকেশ, রমনায় গিয়েছো?
রমনা শুনেই একটু রোমাঞ্চ অনুভূত হলো। আজ আমি জানাবো। ভুলেই গিয়েছিলাম উত্তেজনায়। বললাম, না তো!!!
সে কি!!! রমনায় যে বোমা ফুটেছে জানো??
কি বলেন???
শোন গুরুর সাথে দেখা করে, তারপর আমরা রমনায় যাবো।
কয়েক সেকেন্ড মাত্র। বললাম, দাদা এই স্কেচটা গুরুকে দিয়ে বলবেন..... না থাক কিছু বলতে হবে না। আমি রমনায় যাচ্ছি।
আমি যখন টিএসসি পৌঁছলাম, তখন রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্র ইউনিয়ন বক্তৃতা দিচ্ছে। আমি তখন টিএসসি চিনি না। আমার ধারণা রাজু ভাস্কর্যটাই টিএসসি। কয়েকটা চক্কর দিলাম। কিন্তু কোথাও দেখা নেই। কফি হাউস ঘুরলাম, কিন্তু নেই। রিক্সা নিয়ে ওর হলে এলাম... আসেনি। আবার গেলাম। নেই। আবার এলাম। নেই। ঢাকা মেডিক্যাল গেলাম। নেই। পিজি গেলাম। নেই। আবার হলে এলাম। নেই। আবার টিএসসি। নেই। রমনা ঘুরলাম। নেই। আবার হল। নেই। আবার টিএসসি। নেই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। দেখা নেই। বিভ্রান্তের মতো ঘুরছি। যেখানে একটু জটলা দেখি.... নেই। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রিক্সা আসা যাওয়া করলাম। কিন্তু নেই। শেষ বারের মতো ওর হলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া শোধ করে যেই না পা বাড়াবো.... ওমনি সেই চেনা কণ্ঠের ডাক!!! রাকেশ এইটা কি হলো??? (তখন বুকে কেমন করছে, বোঝানো কি সম্ভব!!!) অন্ধকার তাই কেউ দেখেনি.... খুশিতে চোখে পানি। তুমি ঠিক আছো? তোমার কোন সমস্যা হয় নি তো? আমি তো পাগলের মতো পুরো টিএসসি ঘুরলাম.... কিন্তু তোমার দেখা পাইনি।
মিথ্যে বলবেনা। আমি ডাসের পাশেই ছিলাম পুরো সকাল। বলেছিলাম না তোমাকে খুব প্রয়োজন। তুমি তো আসলেনা। ও... তুমি খুব ইম্পরট্যান্ট কি যেন বলবে বলেছিলে। ... না আগে আমি বলি, সাকিব..!!! একটা ছেলে অন্ধকার থেকে বেরোল। রাকেশ আজ আমরা বিয়ে করেছি। তুমি নাই, তাই আমার সাক্ষীও ওকে যোগাড় করতে হলো। তুমি থাকলে কত ভালো হতো। এই যে দেখো... আমার নাচের কলসিটা কত ভারি.... আমাকে একা একা টানতে হয়েছে পুরোটা দিন।
আমি বললাম, হুম.... আসলেই ভারি। তোমার হলের গেট তো বন্ধ হয়ে যাবে!!!
হলে হোক। আমি দুটো জামা নিয়েই ওর ফ্ল্যাটে চলে যাবো। কালকে আসবো। ... আচ্ছা তোমার কি যেন কথা ছিল আমার সাথে। বলেছিলে, সারপ্রাইজ!!!
হুম..... অবশেষে নচিকেতার সাথে দেখা হলো আজ সকালে। কথা হলো।
কি বলো!!! কিভাবে!!! সত্যি!!!
হু.... !
আচ্ছা.... তুমি ওর সাথে দাঁড়াও। আমি যাবো আর আসবো।
মাধবী চলে গেলো। আমি সাকিবকে সঙ্গ দিচ্ছি। যেমনটা এতদিন মাধবীকে দিতাম। একটু পর মাধবী ফিরে আসবে। হয়ে যাবে একেবারে অন্য কারো। আর আমি!! আপনাদের জন্য নিয়ে আসবো নতুন কোন গল্প। যে গল্পটি আপনি এতক্ষণ পড়লেন। এটাই সেই গল্প। যেখানে আছে একটু সত্য, অনেকটুকু কল্পনা, সবকিছু মিলে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা আর কতগুলো মিথ্যা।
আর এভাবেই বাংলা নববর্ষের দিনে আমি, মাধবী আর নচিকেতাকে নিয়ে একটা মিথ্যা গল্পের জন্ম হলো।
২১ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
২৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী